দিনাজপুর জেলা কোতয়ালী থানার জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ড মামলার রহস্য উদঘাটন ও প্রধান আসামী গ্রেফতার-

—————————- “প্রেস বিজ্ঞপ্তি”——————————-
ICT & MEDIA CELL, DISTRICT POLICE DINAJPUR;
[DATE: 26.03.2023]

গত ২৪/০৩/২০২৩ তারিখ বিকাল ০৫.০০ ঘটিকায় দিনাজপুর কোতয়ালী থানাধীন ০৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ০৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত তাঁতীপাড়া গ্রামস্থ জনৈক মদন এর বাড়ীর পার্শ্বে খড়ের পালার মধ্যে অজ্ঞাত লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। এলাকাবাসী ও ভিকটিমের পরিবারের সনাক্ত মতে ভিকটিমের নাম জিয়াউর রহমান(২২), পিতা-মোঃ সাহাজ উদ্দীন, সাং-হরিহরপুর (কাউয়াপাড়া) থানা-কোতয়ালী, জেলা-দিনাজপুর। ঘটনাটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধরে নিয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ দ্রুত লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরন করেন। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল দিনাজপুর এর নির্দেশে ভিন্ন ভিন্ন অভিযান টিম করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ভিকটিমের বড় ভাই মোঃ সাগর আলী, পিতা-সাহাজ উদ্দীন, সাং-হরিহরপুর (কাউয়াপাড়া) বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় এজাহার নামীয় দুইজনসহ অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে কোতয়ালী থানার মামলা নম্বর-৭৮/২৪৭ তারিখ-২৪/০৩/২০২৩খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজু করা হয়। উক্ত মামলার এজাহার ভুক্ত আসামীদ্বয় হলেন ১। মোঃ মাসুদ রানা(২২), পিতা-মোঃ জুয়েল (কসাই), সাং-শিকদারহাট (চাউলিয়াপাড়া) ২। মোঃ শাহিনুর রহমান(২৫), পিতা-মোঃ সোহরাব হোসেন, সাং-হরিহরপুর উভয় থানা-কোতয়ালী, জেলা-দিনাজপুর।

মামলা রুজুর পরপরই দিনাজপুর জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব শাহ ইফতেখার আহমেদ, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনায় থানা পুলিশের একটি চৌকশ দল অভিযান শুরু করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ মমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) জনাব আব্দুল্লাহ আল মাসুমের সমন্বিত পরিকল্পনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল জনাব শেখ মোঃ জিন্নাহ আল মামুন এর তত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ কোতয়ালী থানা জনাব মোঃ তানভিরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ গোলাম মাওলা শাহ্ এবং তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক(অপারেশন) জনাব মোঃ জাকির শিকদার এর অংশগ্রহণে অভিযান শুরু হয়।

অভিযান দল দ্রুত এজাহার নামীয় ০২ নং আসামী মোঃ শাহিনুর রহমানকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। ধারাবাহিক অভিযানে ২৫/০৩/২০২৩ তারিখ বিকাল ০৫.০০ ঘটিকায় ০১ নং এজাহার নামীয় আসামী মোঃ মাসুদ রানা (২২) কে কোতয়ালী থানাধীন শিকদারহাট এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ০১ নং এজাহার নামীয় আসামী মোঃ মাসুদ রানা এ হত্যাকান্ড সংগঠনের কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায়, তিনি শিকদার হাট হাসমতের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে কাঠের ফার্নিচারের ডিজাইনের কাজ করে। ভিকটিম জিয়াউর রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব ছিলো। তারা দীর্ঘদিন একসাথে চলাফেরা করায় তাদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়। উভয়ে একসাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত। সাম্প্রতিক মাসুদের টাকার সংকট থাকায় ভিকটিমের টাকায় নেশা জাতীয় ট্যাবলেট বাকীতে সেবন করতে থাকে। এপর্যন্ত নেশা দ্রব্য কেনা বাবদ ভিকটিম, আসামী মাসুদের জন্য ৪,৭০০/-টাকা খরচ করে। গত ২৩/০৩/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা ০৭.০০ ঘটিকায় জিয়াউর তার ফোন দিয়ে আসামী মাসুদের ফোনে কল রিকোয়েষ্ট দিলে মাসুদ কল ব্যাক করে জিয়াউর রহমানের নিকট নেশা বাবদ খরচের টাকা দাবি করে। মাসুদ উক্ত টাকা দেওয়ার জন্য তাঁতী পাড়ার মদনের বাড়ীর পুকুর পাড়ে খড়ের গাদার আড়ালে আসতে বলে। ভিকটিম তার কথামত ০৭.৩০ ঘটিকায় আসামীর কথিত খড়ের গাদার নিকটে আসে। ভিকটিম জিয়াউর সঙ্গে আনা ০৪টি ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট সেখানে বসে দু’জনে ০২ (দুই) টি করে সেবন করে। সে সময় অপরিচিত একটি ছেলে ও একটি মেয়ে অন্ধকারে খড়ের পালার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। নির্জন স্থানে তাদের উপস্থিতি সন্দেহজনক হওয়ায় সংগোপনে তারা উভয়ে তাদের পিছু নেয়। তারা আপত্তিকর ঘটনা ঘটার পূর্বেই তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলে এবং ভিকটিমের মোবাইলে তাদের ভিডিও ধারন করে। ঘটনাটি জনসম্মুখে প্রকাশের ভয়ভীতি দেখায় এবং তথ্য গোপন রাখার শর্তে ২০,০০০/- টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে টাকা দেওয়ার শর্তে তাদের মোবাইল ফোনটি রেখে দিয়ে তারা তাদেরকে ছেড়ে দেয়। ভিকটিম জিয়াউর আসামী মাসুদকে বলে নয়নের মোবাইলটি ফেরৎ দেব না। এটা বিক্রি করে কয়েকদিনের নেশার খরচ হবে, উক্ত নারী ও পুরুষ আসামী মাসুদের পরিচিত হওয়ায় মাসুদ বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে নি। আসামী মাসুদ, জিয়াউরকে বলে মোবাইলটি আমাদের কাছে থাকলে সমস্যায় পড়তে পারি। তখন মাসুদ মোবাইলটি বাসায় রেখে আসার কথা বলে বাড়ীতে যায়। ভিকটিম জিয়াউর খড়ের পালার কাছে বসা ছিলো। মাসুদ মোবাইলটি বাসায় রেখে একটি ধারালো বাটাল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। ভিকটিম জিয়াউরের পাওনা টাকার চাপ এবং তার প্রতিবেশীর মোবাইল বিক্রির প্রস্তাবে মনের ক্ষোভে বাটাল দিয়ে জিয়াউরের গলা এবং বুকে ৩/৪ টি আঘাত করে। তখন জিয়াউর ছটফট করে মৃতুবরন করলে খড়ের পালার নিচে খড় দিয়ে তাকে ঢেকে রাখে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বাটাল ও ভিকটিমের মোবাইল পাশের পুকুরে ফেলে দিয়ে বাড়ীতে চলে যায়। বাড়ীতে গিয়ে গোসল করে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন ঘটনাটি ভুলে থাকতে আসামী দিনভর নানা মাদক সেবন করে ও নিজেকে আত্মগোপন রাখে। ঘটনায় একজনের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করলেও আরো অজ্ঞাতনামা আসামীরা হত্যাকান্ডে জড়িত রয়েছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে। আরো কোন ব্যাক্তি হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আপডেট ফলাফল আপনাদের অবহিত করা হবে।

অভিযানে ০১ নং এজাহার নামীয় আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক উল্লেখিত আলামত উদ্ধার করা হয়-
১। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বাটাল (পুকুর হতে উদ্ধার)
২। ভিকটিমের মোবাইল (পুকুর হতে উদ্ধার) ০১টি।
৩। আসামীর ব্যবহৃত মুঠোফোন ০২টি।
৪। মোট সিম ০৩ টি।

আইসিটি এন্ড মিডিয়া সেল
দিনাজপুর।