প্রোপাইটর লক্ষী কসাই..

নিজস্ব প্রতিবেদক
বছর ১৫ আগের কথা৷ হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছে এক ছেলেসন্তান। খুশির চেয়ে দুশ্চিন্তা বেশি লক্ষী রাণী শর্মার৷ স্বামীর উপার্জন নেই।অগত্যা গায়ের গয়না-গাটি বিক্রি করে দোকান দিলেন মাংস বিক্রির৷ আজ দেশের বড়ো বড়ো পত্র-পত্রিকায় উঠছে দিনাজপুরের বিরলের সে দোকানের নাম : লক্ষী কসাইের মাংস ভান্ডার।

মহিলা হবে কসাই! এ কেমন কথা! না আছে সমাজের স্বীকৃতি, না পরিবারের সম্মতি। লক্ষীরাণী পাশে পেয়েছিলেন স্বামী উষা দেবশর্মাকে৷ আজও সে দোকানে লক্ষী নিজ হাতে খাসির চামড়া ছাড়ান,মাংস কাটেন,বেচেন৷ স্বামী হাটে হাটে ঘুরে খাসি কেনেন৷ অভাবের সংসারকে এভাবেই চারহাত এক করে টেনেছেন এই দম্পতি ৷ মা যে বাজারে মাংস বেচে, সেখানেই হাইস্কুলে লক্ষীর ছেলে আজ ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। আছে এক বছর ৪-এর রাজকন্যাও।স্বামী-সন্তান,শ্বশুর-শ্বাশুড়ী নিয়ে সুখে আছেন এই সংগ্রামী নারী৷

দৈনিক ৮-১০ টি খাসির মাংস গড়পড়তা বিক্রি হয় লক্ষীর৷ এক দিনে ৩১ টি খাসি বিক্রির রেকর্ড আছে তাঁর৷ দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন লক্ষী কসাইয়ের নাম-ডাক শুনে। অবাক বিস্ময়ে দেখেন, এক গেঁয়ো আটপৌরে নারী কি নিপুণ দক্ষতায় চাপাতির কোপে টুকরো করছেন মাংসের পিন্ড।
লক্ষীর কথায়, গরিবরা যাতে মাংস কিনতে পারে, তাই আজও ১০০ টাকায় মাংস বেচেন তিনি৷ মুসলমানদের জবাইয়ের ধরণ ভিন্ন, সে কথা মাথায় রেখে হিন্দু মুসলমান আলাদা আলাদা খাসি জবাইয়ের ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি৷

সবার যুদ্ধ কি খবর হয়? লক্ষী-ঊষা দম্পতির যে জীবনযুদ্ধ, তাদের মতো আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা আরও কত জীবনসংগ্রামী মানুষ এই বাংলায়, তাদের গল্প কবে জানবে বাংলাদেশ?


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *