সাতক্ষীরায় ছেলেকে আটকে রাখলো পুলিশ অক্সিজেনের অভাবে পিতার মৃত্যুর অভিযোগ

নিউজ ডেস্কঃ করোনায় আক্রান্ত বাবার করুন অবস্থা বাঁচাতে হলে প্রয়োজন অক্সিজেন। বৃদ্ধ পিতার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশকে টাকা দিতে না পারায় ছেলেকে আটকে রাখে পুলিশ। অবশেষে ২ ঘন্টা আটকে রাখার পরে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক সুভাষচন্দ্রকে ২০০ টাকা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তার পিতা।

এমন হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। সহকারী উপ-পরিদর্শক সুভাষ চন্দ্র ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ওই বৃদ্ধের নাম মো. রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।

বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ পিতার জন্য জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক সুভাষচন্দ্র।

লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তিনি তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘন্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন ।

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। বাড়িতে যেয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তার পিতা মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো পিতাকে বাঁচানো যেত। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটাগাছা পুলিশ ফাড়ির একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, সুভাষের কারণে পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এলাকার যত জমা-জমির ঝামেলা আছে সেগুলোর মধ্যে সে মাথা দেয়। অনেকে তাকে ল্যান্ড সুভাষ নামে চেনেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষচন্দ্র বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসছিল মোটরসাইকেলটি। কাগজপত্রও ছিলনা। পরে ঘটনা শুনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাত্র ২/৩ মিনিট মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখা হয়েছিল।

১হাজার টাকা দাবি করা এবং ২শ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। তার সাথে আমার টাকা-পয়সা নিয়ে কোন কথা হয়নি।

এ বিষয়ে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তারেক আজিজ বলেন, আসলে আমিও বিষয়টা পরে শুনেছি। এনিয়ে আমাদের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্যার, ওসি স্যার আমরা সবাই এ বিষয়টা নিয়েই এখন পর্যন্ত আছি।

তিনি আরও বলেন, আসলে ওনার অন টেস্ট গাড়ি ছিলো তো এজন্য আটকানো হয়েছিলো। পরে ওনার বাবার কথা শুনে ওনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিলো। আর দুই ঘণ্টা আটকানোর যে কথা উঠেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে বলেছে যে না সর্বোচ্চ তাকে ১৫ মিনিট আটকানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হুসেন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে, এ সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ‌শামসুল হক বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার মাধ্যমে জানলাম। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত এএসআই সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সূত্র সমকাল)